আপনি কি যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? যাকাত কাকে বলে, যাকাত কি বা বর্তমানে একজন ব্যক্তির কত টাকা থাকলে তার ওপর যাকাত ফরজ হয় এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে চান? তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই পুরো পোস্ট জুড়ে আমি আপনাকে যাকাত সম্পর্কিত যাবতীয় সকল বিষয়ে একটি সঠিক জ্ঞান প্রদান করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ হলো যাকাত। প্রত্যেক স্বাধীন ও প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীকে প্রতিবছর তার আয় ও সম্পদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ যদি তা ইসলামে শরীয়ত নির্ধারিত পরিমাণ অতিক্রম করে তাহলে তাকে যাকাত প্রদান করতে হয়।
কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা যেখানে নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন তার পর পরেই অনেক জায়গায় যাকাতের কথা বলেছেন। কোরআন মাজিদে ডাকাত কথাটি ৩২ বার উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে বলেনঃ- আকিমুস সালাত ওয়া আতুস যাকাত অর্থাৎ তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। সুতরাং যাকাত কাকে বলে, যাকাত কি বর্তমানে একজন ব্যক্তির কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সেই সকল কিছু আমাদের জানতে হবে। নিচে যাকাত সম্পর্কে সকল কিছু আলোচনা দেওয়া হলো-
সূচিপত্রঃ যাকাত কাকে বলে - যাকাত কত প্রকার ও কি কি
যাকাত কাকে বলেযাকাত কত প্রকার ও কি কি
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে বা যাকাত প্রদানের খাত কয়টি
যাকাত আদায় করা কি
যাকাত কাকে বলেঃ
যাকাত কাকে বলে? যাকাত শব্দটি আরবি শব্দ। যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলঃ- পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও বৃদ্ধি পাওয়া। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে প্রতি বছরে তার সম্পত্তির শতকরা ২.৫০% হারে নির্দিষ্ট খাতে অর্থাৎ গরিব দুখির মাঝে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।
আবার কোন কোন ইমামগণের মতে, যেমনঃ-
ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মতে, যা প্রদান করার মাধ্যমে মন ও আত্মার পবিত্রতা লাভ হয় , সম্পদের বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদ পরিচ্ছন্ন হয় তাকে যাকাত বলে।
যাকাত কত প্রকার ও কি কিঃ
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হল যাকাত। যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, পরিশুদ্ধ হওয়া ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে যাকাত প্রদান করার কথা অনেক জায়গায় প্রায় ৩২ বার বলেছেন। যাকাত প্রদান করলে সম্পদ কমে না বরং বৃদ্ধি পায়। তবে যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্তসাপেক্ষ রয়েছে। এখন আমরা জানবো যাকাত কত ধরনের রয়েছে বা যাকাত কত প্রকার ও কি কি। যাকাতের প্রকার বা ধরন হলো যাকাত চার ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ-
১। ফসলের যাকাত। অর্থাৎ শরীয়তে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ ফসল হয়ে থাকলে তার যাকাত প্রদান করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ যেনা কাকে বলে - যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে
২। গবাদি পশুর যাকাত অর্থাৎ শরীয়তে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ হয়ে থাকলে তার যাকাত প্রদান করতে হয়।
৩। সোনা বা রুপার যাকাত অর্থাৎ শরীয়তে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণ সোনা বা রুপা হয়ে থাকলে তার যাকাত প্রদান করতে হয়। এবং সর্বশেষ বা
৪। রোজার যাকাত যাকে সদকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর বলা হয়। মূলত এগুলোকেই যাকাতের প্রকার বা যাকাতের ধরন হিসেবে গণ্য করা হয়।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ঃ
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ হল যাকাত। নামাজ, রোজা, হজ্জ এই ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে যেমন কতগুলো শর্ত রয়েছে ঠিক তেমনি যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রেও কতগুলো শর্ত রয়েছে যেগুলো পূর্ণ না হলে যাকাত ফরজ হয় না। নামাজ যেমন বান্দার একটি মনস্তাত্ত্বিক ইবাদত ঠিক তেমনি যাকাত হল বান্দার আর্থিক একটি ইবাদত যা অর্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। গরিবদের ওপর যাকাত ফরজ নয়। সমাজের বিত্তবানশালী ব্যক্তিদের ওপর শর্তসাপেক্ষে যাকাত ফরজ হয়ে থাকে।যে শর্তসাপেক্ষে কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হয়ে থাকে এমন ১০টি শর্ত নিচে দেওয়া হলঃ-
১। যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্তই হল মুসলিম হওয়া। ধনবান মুসলিম ব্যক্তিদের জন্য যাকাত প্রদান করা একটি ফরজ এবাদত। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার প্রথম শর্তটি হল মুসলমান হওয়া অমুসলিম কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ নয়।
২। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ শরিয়তের নিরধারিত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা সমপরিমাণ মূল্যের টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হওয়া। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি হিসাব পরিমান সম্পদের মালিক না হলে তারপর যাকাত ফরজ নয়।
৩। বালেগ হওয়া অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। নাবালেগ অর্থাৎ যার পূর্ণ বয় পূর্ণ বয়স হয়নি তার ওপর যাকাত ফরয নয়। যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
৪। বিবেক ও বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হতে হলে বিবেক ও বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হতে হবে পাগলের ওপর যাকাত ফরজ নয়। কোন পাগল যদি নেশার পরিমান সম্পদের মালিক হয় তার পরেও তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না। তবে কিছু কিছু মাযহাব মতে পাগলের ওপরও যাকাত ফরজ হবে অতঃপর তার পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন অভিভাবক সেই যাকাত আদায় করবে।
৫। স্বাধীন হওয়া। যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সম্পদের মালিক কে স্বাধীন হওয়া অন্যতম একটি শর্ত। কোন দাস দাসীর ওপর যাকাত ফরজ নয়।
৬। সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকা। অর্থাৎ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা ও পূর্ণাঙ্গ দখল থাকতে হবে। সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে অন্যথায় যাকাত ফরজ নয়।
আরো পড়ুনঃ নামাজ - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত ও নিয়ম
৭। সম্পদ বর্ধনযোগ্য হওয়া। যাকাত প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রকে সহযোগিতা করা এবং তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। কিন্তু আল্লাহ চান না যে কোন ব্যক্তি যাকাত আদায় করতে গিয়ে দারিদ্র হয়ে যাক। কোন ব্যক্তির সম্পদ যদি বর্ধনশীল না হয় তাহলে বছর পর পর যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে তার সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া অপরিহার্য।
৮। সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত হওয়া। যাকাতের সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত হওয়াটা একটি শর্ত। নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নয। তাই যে ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের থেকে বেশি সম্পদ রয়েছে তার উপর যাকাত ফরজ।
৯। সম্পদ ঋণ মুক্ত হওয়া। অর্থাৎ যাকাতের ক্ষেত্রে সম্পদ ঋণ মুক্ত হতে হবে। ঋণ পরিশোধ করার পরে যদি কোন সম্পদ নিসাব পরিমাণ থাকে তাহলে তার যাকাত প্রদান করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বলেছেন যদি কোন ব্যক্তির ঋণ থাকে তাহলে সে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করবে তারপর যাকাত প্রদান করবে।
১০। সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির সম্পদ যদি ১ বছরের কম সময় তার মালিকানায় থাকে তবে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়। এ শর্তটি ব্যক্তির নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক মালামাল যাবতীয় সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে বা যাকাত প্রদানের খাত কয়টিঃ
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে বা যাকাত প্রদানের খাত কয়টি প্রশ্ন দুটি দুরকম হলেও ভাবার্থ মূলত একই। যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাত রয়েছে সাধারণত সেই খাত গুলোতে যাকাত প্রদান করা হয়। চাইলেই যে কেউ যাকাত গ্রহণ করতে পারে না বা সকলকে যাকাত প্রদান করাও যাবেনা। যাকাত কাদেরকে দেওয়া যাবে অর্থাৎ যাকাত প্রদানের খাত সংখ্যা মূলত আটটি। মূলত আটটি খাতের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিগণকে যাকাত প্রদান করা হয়। নিম্নে যাকাত প্রদানের খাত গুলো উল্লেখ করা হলোঃ-
অর্থঃ তোমরা যদি প্রকাশ্যে সাদকাহ প্রদান কর তবে উহা ভাল, আর যদি তা গোপনে কর এবং দরিদ্রদের কে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভাল (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭১)।
২। মিসকিনঃ যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে ৮টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় খাতে আল্লাহ তায়ালা মিসকিনের কথা উল্লেখ করেছেন। এখন কথা হলো মিসকিন কারা ? মিসকিন হল সেই সকল ব্যক্তি যারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারে না আবার অন্যের কাছে নিজের দারিদ্র্যের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না। যাদেরকে দেখলে মনে হয় তারা সচল এমন ব্যক্তিই হল মিসকিন। সুতরাং যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাতের দ্বিতীয় খাটটিতে যাকাত প্রদান করতে হলে খুব ভালোভাবে খুঁজে খুঁজে এমন মিসকিনকে বের করে যাকাত প্রদান করতে হবে। মিসকিন সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে,
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সেই ব্যক্তি মিসকিন নয় যে একটু খাবারের জন্য বাইকটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় যা তাকে দেয়া হলে সে ফিরে আসে। বরং মিসকিন হল সেই ব্যক্তি যার প্রয়োজন মেটানোর মত সামর্থ্য নেই অথচ তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে তাকে সদকা করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চাইতে পারে না।
ইবনু সায়েদী আল-মালেকী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। যখন আমি আমার কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর নিকট পৌঁছে দিলাম তখন তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। তখন আমি বললাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এই কাজ করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান নিব। তখন তিনি বললেন, আমি যা দিচ্ছি তা নিয়ে নাও। কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও আমাকে পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা বলেছিলাম। রাসূল (সাঃ)আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে কিছু দেওয়া হয়, তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা সাদকাহ্ কর।
৪। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন অমুসলিমকে যাকাত প্রদানঃ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যাকাতের ৪ নাম্বার খাতে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমকে যাকাত প্রদান করার কথা বলেছেন। যাতে করে একজন অমুসলিম ব্যক্তি ইসলামের পথে আকৃষ্ট হয়।
৫। দাস মুক্তির জন্য যাকাত প্রদানঃ যারা কোন চুক্তির মাধ্যমে দাসে পরিণত আছে তাদেরকে তার মালিকের নিকট থেকে ক্রয় করে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
৬। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানঃ কোন ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকে এবং সেই ঋণ পরিশোধ করার মতো যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে তাকে সেই ঋণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ সুদ কি - সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
৭। আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারী ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানঃ অর্থাৎ যাকাত প্রদানের ৭ নম্বর হল আল্লাহর রাস্তায় যারা আছে, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের কাজে যারা নিয়োজিত ব্যক্তি তাদেরকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। হাদিসে বর্ণিত আছে,
আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ব্যক্তির জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।
৮। মুসাফির ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানঃ যাকাত প্রদানের সর্বশেষ অর্থাৎ ৮ নাম্বার ঘাটতি হলো মুসাফির ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান। যদি কোন মুসাফির ব্যক্তির টাকা ফুরিয়ে যায় তাহলে তাকে যাকাত প্রদান করার মাধ্যমে তাকে তার খরচ প্রদানের মাধ্যমে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করতে হবে। যদিও সেই মুসাফির ব্যক্তি ধনী হয় অর্থাৎ তার বাসায় অনেক টাকা থাকে এমনও হয়।
যাকাত আদায় করা কিঃ
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে প্রতি বছরে তার সম্পত্তির শতকরা ২.৫০% হারে নির্দিষ্ট খাতে অর্থাৎ গরিব দুখির মাঝে ব্যয় করাকে যাকাত বলে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি শরীয়তে নির্দিষ্ট নিসাব পরিমান অর্থাৎ ৭.৫তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫০ তোলা রুপা কিংবা সমপরিমাণ মূল্যের টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক হয় তাহলে তারসম্পদের যাকাত আদায় করা ফরজ। আবার কোন ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া স্বত্বেও যাকাত প্রদান না করে থাকেন তাহলে তাদেরকে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুশরিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং সমাজে যারা ধনী মানুষ তাদের প্রত্যেকের উচিত যাকাত প্রদান করা।
পরিশেষে বলবো আপনারা যারা সমাজে বৃত্তশীল ব্যাক্তি আছেন তারা সবাই ইসলামের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী যাকাত প্রদান করবেন। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে গরিব মানুষকে সহায়তা করা হয় সমাজ থেকে গরিব দুঃখী দূর হই। যাকাত দিলে সম্পদ কমে না বরং সম্পদ বাড়ে। যাকাত দিলে আত্মার পবিত্রতা লাভ হয়, সম্পদ পরিচ্ছন্ন হয়। কিছু শর্তসাপেক্ষে আল্লাহ তায়ালা ধনী ব্যক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত প্রদান করা এবং যাকাতের মাধ্যমে গরীব দুঃখীদের দুঃখ বিমোচন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে যেন হালাল কে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনে চলার তৌফিক দেন আমিন।
0 Comments